ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ইউরোপীয় ফুটবল ছেড়ে যাওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ইউরোপে সবশেষ তিনি খেলেছেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। ম্যান ইউনাইটেড ছেড়ে সৌদি আরবের আল নাসরে যাওয়ার পর তাঁর পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন তিনি।
অধিনায়ক হওয়ার বাড়তি চাপ তো থাকেই। বিড়ম্বনায় কোনো অংশে কম না। আর যদি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুল করে বসেন, তাহলে তো কথাই নেই। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার বন্যা বইয়ে যায়। মাঝে মাঝে সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।
দীর্ঘদিন পর শিরোপা জেতার আনন্দ বুঝি এমনই হয়। বায়ার্ন মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় গত রাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চোখে দেখা গেছে অশ্রু। পর্তুগালের দ্বিতীয় নেশনস লিগ জয় ছাপিয়ে তিনিই হয়ে ওঠেন মধ্যমণি।
ক্লাব ফুটবলে মুড়ি-মুড়কির মতো শিরোপা জিতেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রসঙ্গ আসে, তখন শোকেসটা হাহাকার করে ওঠে শিরোপার জন্য। অবশেষে পর্তুগালের জার্সিতে দীর্ঘ ৬ বছর পর শিরোপা জিতলেন ৪০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
দুজন একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। খেলা বাদে একসঙ্গে খুব একটা দেখাও যায় না। তবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকলেও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এসেছেন বরাবর। লিওনেল মেসিকে ভালো লাগার এটাই কারণ বলে জানিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
জার্মানিকে হারানো এক রকম অসম্ভবই হয়ে গিয়েছিল পর্তুগালের জন্য। ২০০০ সালের ইউরোর পর অবশ্য তেমন একটা মুখোমুখিও হয়নি এই দল দুটি। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় পর্তুগাল গত রাতে ২৫ বছর পর মুক্তি পেল জার্মান-জুজু থেকে।
সৌদি আরবে কত দিন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকছেন—এটা নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে অনেক বেশি। কারণ, আল নাসরের সঙ্গে পুরোনো চুক্তির মেয়াদও আর বেশি দিন নেই। আর গত রাতে সামাজিকমাধ্যমে রহস্যময় পোস্ট দিয়ে ব্যাপারটা আরও ঘনীভূত করলেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
ক্লাব বিশ্বকাপে ৩২টি দলই চূড়ান্ত। সেখানে জায়গা হয়নি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্লাব আল নাসরের। তবুও ক্লাব বিশ্বকাপে রোনালদোর খেলার সম্ভাবনা দেখছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। কিন্তু কীভাবে?
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ইউরোপ ছেড়েছেন অনেক আগে। সৌদি আরবের আল নাসরে এরই মধ্যে ২৮ মাস কাটিয়ে দিয়েছেন। একের পর এক গোল করছেন তিনি। এবার পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের সৌদি ছেড়ে ব্রাজিলে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
রেকর্ড গড়ার চেয়ে সহজ কাজ হয়তো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে নেই। মাঠের ফুটবল তো বটেই। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তিনি গড়ে চলেছেন রেকর্ড। টানা তিনবার সর্বোচ্চ উপার্জন করা ক্রীড়াবিদ হলেন পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড।
আল আখদৌদের বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলেননি। তবে রোনালদোহীন এই আল নাসর গতকাল ছিল অনেক ভয়ংকর। সৌদি প্রো লিগে গত রাতে ৯-০ গোলে জিতেছে আল নাসর।
সৌদি আরবের আল নাসরে সময়টা ভালোই যাচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। নিয়মিত গোল করছেন। সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেনও। তবে এমন ছন্দে থাকা রোনালদোর আর বেশি দিন হয়তো সৌদি ক্লাবে থাকা হবে না।
২-০ গোলে এগিয়ে থেকে ৩-২ গোলে পরাজয়—এমনটা যে ফুটবলে কখনো হয় না তা নয়। আল নাসরের সঙ্গে গতকাল ঘটেছে এমনটা। তাতে সৌদি প্রো লিগে শিরোপা জয় এক রকম অসম্ভব হয়ে গেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-সাদিও মানের আল নাসরের জন্য।
বাবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পথে হাঁটা আরও আগেই শুরু করেছেন ক্রিস্টিয়ানো ডস সান্তোস, বেছে নিয়েছেন ফুটবলকে। এবার গায়ে জড়াতে যাচ্ছেন পর্তুগালের জার্সি। কোচ হোয়াও সান্তোসের ২২ সদস্যের পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পেলেন রোনালদোর বড় ছেলে সান্তোস।
ইউরোপ ছেড়ে অনেক আগেই ভিনদেশে পাড়ি জমিয়েছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তবু সময়ের দুই তারকা ফুটবলারকে নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের আগ্রহ এখনো তুঙ্গে।
আল নাসরের সবশেষ ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। দামাকের বিপক্ষে সৌদি প্রো লিগের সেই ম্যাচ জিতেছিল রোনালদোহীন আল নাসর। এবার রোনালদো ফিরেই করলেন দুর্দান্ত এক গোল।
মুড়ি-মুড়কির মতো গোল করে চলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যখনই গোলের দরকার, তখনই তিনি আবির্ভূত হন স্বমহিমায়। সৌদি প্রো লিগে গতকাল তাঁর ভেলকিতে আল নাসর পেল অবিশ্বাস্য এক জয়।